ক্ষণিকের ভালোলাগা ও একটি ফেইকবুক কাহিনী
ক্ষণিকের ভালোলাগা ও একটি ফেইকবুক কাহিনী
তারপর যাকেই পাই Add friend এ ক্লিক করতে থাকি। দেখলাম Fake ID তেই Freedom বেশি। যেমন খুশি স্ট্যাটাস দেয়া যায়, যা খুশি কমেন্ট করা যায়, বেশি কিছু ভাবতে হয়না, মন যা চায় বলে ফেলা যায়।
হঠাত্ একদিন inbox এ একটা massage আসল, আকাশ লীনা থেকে।
: কেমন আছ তুমি?
কথাটার মাঝে কেমন যেন একটা আকর্ষণ। মনে হয় অনেক দিনের কাছের কেউ। Reply দিলাম,
: f9, u?
তারপর দ্রুত তার প্রোফাইলে ঢুকলাম।
শুধু ফুল, পাখি আর পুতুলের ছবি।
Gender: Female
Courent city: Dhaka, Bangladesh
বাকি সব ইনফরমেশন হাইড করা। চিনতে পারার ব্যর্থ চেষ্টা বাদ দিলাম।
ওপাশ থেকে Reply আসল,
: ভালো। প্রোফাইল চেক করছিলে, তাইতো?
: হ্যা, কে তুমি?
: আমি অন্তঃপুরের মেয়ে, চিনবেনা আমাকে
: নাম ধার করেছ জীবনানন্দ থেকে, পরিচয় দিলে রবীন্দ্রনাথ থেকে, তোমার ঘরে আর কে কে আছে?
: রবি, নজরুল, মহাদেব, জীবনানন্দ, নির্মলেন্দু আরো অনেকে।
: সারাক্ষণ এদের নিয়েই থাকো?
: অন্তঃপুরের মেয়ে। কি আর করব?
: আমি যদি হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা হই?
: সুরের মায়াবী টান যদি ঘরের বাহির করেই ফেলে, তবে তোমার আলোয় আমার পৃথিবী সাজাব। আমি আশায় বসে আছি, ভেঙে মোর ঘরের চাবি..
: চাবি ভাঙলে তালা খুলব কী দিয়ে?
: তাহলে তুমি, কেমন বাঁশিওয়ালা হলে? আমার বাঁশিওয়ালা হবে-
কাটেনা সে বাঁশের ভেড়া
ভাঙ্গেনা সে তালা,
চোর না হয়ে চুরি করে
গলায় জয়ের মালা।
: এ কেমন চোর?
: মনের ঘরে দেয় সে হানা
চুরি করে মন,
চুরি করে পালায় না সে
হয় সে আপনজন।
: চোর কি হতে পারলাম?
: বাঁশির সুর তো আগে শুনি। মনের ঘরের দরজা জানালা সব খোলা আছে।
: আপাতত এক টুকরা রবীন্দ্রনাথ হলে চলবে?
: চেষ্টা তো কর...
: আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে
প্রভাতপাখির গান!
না জানি কেন রে এত দিন পরে
জাগিয়া উঠিল প্রাণ।
: সত্যি?
: হ্যা, সত্যি।
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা
প্রাণের আবেগ
রুধিয়া রাখিতে নারি।
: বজ্রে তোমার বাজায় বাঁশি
সে কি সহজ গান।
সেই সুরেতে জাগব আমি
দাও মোরে সেই কান।
ভুলব না আর সহজেতে
সেই প্রাণে মন উঠবে মেতে
: কার কাছ থেকে ধার করলে? রবী ঠাকুর?
: হ্যা, গীতাঞ্জলী থেকে।
: সব মুখস্ত নাকি?
: না, বেছে বেছে ভালো লাগা গুলো মুখস্ত করেছি।
: সুর কি প্রাণে লাগল?
: কিছুটা তো বটেই। তুমি কি ভাবছ, আমি সুর বুজিনা? সুর কি শুধু বাঁশের বাঁশিতেই হয়?
এভাবেই লীনার সাথে কথা চলতে থাকে। দিনের পর দিন। ওর কথার মায়ায় ধীরে ধীরে নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম।
হিমাকে ফাকি দিয়ে ওর সাথে কথা বলতাম। ওর সাথে কথা বলতেই বেশি ভাল লাগত। তবে বুকের মাঝে অনুভব করতাম আমি হিমাকেই ভালবাসি।
তবে লীনার প্রতি একটা অন্যরকম ভাললাগা ফিল করতে থাকি।
মনে মনে হিমা আর লীনাকে পাশাপাশি দাড় করালাম। তারপর আমার ভালোলাগার বিচারে মাপতে শুরু করলাম:
একজন আমার মনের রাজ্যের রানী, আরেকজন অদেখা রাজকুমারী।
আমি ভালোবাসি কবিতা,
লীনাও তাই আর হিমার প্রিয় বই রান্নার রেসিপি।
আমার পছন্দ বাংলা গান,
হিমা হিন্দির পোক। লীনার পছন্দও বাংলা। আমার সবচেয়ে বিরক্তকর অনুষ্ঠান ইন্ডিয়ান সিরিয়াল, আর হিমার প্রিয় অনুষ্ঠান ওগুলোই। লীনা বেশি দেখে টেলিফিল্ম, নাটক, হলিউড মুভি। আমিও তাই। এমনিভাবে অনেক কিছুই আমায় যা পছন্দ হিমার ঠিক তার উল্টোটা। এদিক থেকে লীনার সাথেই আমার মনের মিল বেশি।
আমি ভেতরে ভেতরে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলাম। একবার ভাবি হিমার সাথে বিষয়টা শেয়ার করি, আবার না থাক হিমা কষ্ট পেতে পারে। তার চেয়ে ভালো লীনার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই। কিন্তু কোনটাই করতে পারছিলাম না। এভাবেই প্রায় তিন মাস। এদিকে লীনা খুব ব্যস্ত হয়ে উঠল দেখা করার জন্য। আমিও মনে মনে তাই চাইছিলাম।
ভাবলাম হিমার কথা ওর সাথে শেয়ার করব।
কোথায় কীভাবে দেখা করব, লীনাই সব ঠিক করল। দূরে কোথাও যাবে না। ও নিজেই আমার এখানে আসবে।
শুক্রবার, বিকাল ৫ টা, সাউথ কিং চাইনিজ, দোলাইরপাড়।
: কীভাবে চিনব?
: আমি তোমার প্রিয় রঙের শাড়ি পরে তোমার জন্য অপেক্ষা করব।
আমার প্রিয় রঙের শাড়ি ও কীভাবে জানল?
সে প্রশ্নের কোন Reply পেলাম না।
যাইহোক সময় মতো আমিও গিয়ে পৌছলাম।
ভিতরে ঢুকে দেখি সব খালি। দক্ষিণ পূর্ব কর্ণারে চোখ আটকে গেল। বুকের ভিতর বিদ্যুত্ খেলে গেল। এতো আমার চিরচেনা কেউ। সংশয় নিয়ে তবুও এগিয়ে গেলাম। পীঠের ওপর একরাশ কালো মেঘ ছড়িয়ে মাথা নীচু করে বসে আছে। একটা চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসলাম। ও মাথা তুলে আমার চোখে তাকালো। ছল ছল আঁখি যেন এখনি বৃষ্টি নামবে। অপূর্ব মায়া ছড়াচ্ছে, মন চাচ্ছিল দুহাতে আদর করে দেই। আমি ওর চোখে তাকিয়ে থাকতে পারছিলাম না। মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছিল না। শুধু বললাম,
: তুমি!
ও ইশারায় আমাকে থামিয়ে দিল। বলল,
: শুধু আমি বলব। তুমি শুধু শুনবে। একটু থেমে তারপর আবার বলতে লাগল,
: প্রথম প্রথম ভাবতাম তুমি Fun করছ, আমিও তাই করছিলাম। পরে দেখলাম তুমি সত্যি সত্যি মজে গেছ। তখন আমি ভিতরে ভিতরে পুড়তে শুরু করলাম। তারপরও তোমার ওপর আমার বিশ্বাস ছিল। সেই বিশ্বাসের শেষটা দেখার জন্য তোমাকে ডাকলাম। ভাবছিলাম তুমি আসবেনা। তুমি না আসলেই আমি খুশি হতাম। কিন্তু তুমি আসলে। আমার ভালোবাসার পরাজয় হল।
যাক, তুমি যেহেতু আসলে, আমাকে তো চলে যেতেই হবে। So, ভালো থাকো। হিমা ওঠে দাড়াল।
আমি ওর হাত ধরলাম
: Please বসো।তুমি লীনা সাজতে গেলে কেন?
: নিজেকে যাচাই করার জন্য। আমি নিজেকে তিলে তিলে তোমার ভাললাগার মতো করে তৈরি করতে চেয়েছি, তোমার পছন্দের সাথে মিলিয়ে নিজেকে গড়েছি।
অবশেষে নিজেই নিজের কাছে হেরে গেছি।
: না, তুমি হারনি। আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
: তাহলে আমাকে ফাকি দিয়ে কথা বলতে না।
: কিন্তু সেতো তুমিই।
: হ্যা আমি, তবুও এক না।
হিমা ওঠে দাড়াল। কখন ওর চোখ থেক জল গড়িয়ে পড়েছে খেয়াল করিনি। দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে ও বেরিয়ে গেল। আমি শুধু ওর চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম।
;;;;;;; ঢাকা: ১২.০৩.২০২১ খ্রি.
No comments