বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বামপন্থীদের ভূমিকা ।। The Contribution of Leftists to the Rise of Bangladesh
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বামপন্থীদের ভূমিকা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম কেবল একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল না, বরং তা ছিল দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন, অর্থনৈতিক শোষণ এবং সাংস্কৃতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণবিস্ফোরণ। এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় বামপন্থী রাজনীতির ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যদিও প্রায়শই তা মূলধারার আলোচনায় কিছুটা উপেক্ষিত থেকেছে। অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান তাঁর 'বামপন্থী রাজনীতি ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়' গবেষণাপত্রে এই উপেক্ষিত অধ্যায়টি অত্যন্ত নিপুণভাবে উন্মোচন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে বামপন্থী দলগুলো, তাদের আদর্শগত অবস্থান এবং জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে, স্বাধীনতার বীজ বপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মনিরুজ্জামান বামপন্থী রাজনীতিকে কেবল একটি সংকীর্ণ রাজনৈতিক মতবাদ হিসেবে দেখেননি, বরং একে সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমতা এবং জনগণের অধিকার আদায়ের একটি বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম বছরগুলোতে বামপন্থী মতবাদ
পাকিস্তানের
জন্মের পর পূর্ব পাকিস্তানে বামপন্থী রাজনীতি দ্রুত প্রসার লাভ করে। নবগঠিত
রাষ্ট্রের শোষনমূলক চরিত্র এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক আধিপত্য বামপন্থী
মতাদর্শের প্রসারে সহায়ক হয়েছিল। তালুকদার মনিরুজ্জামান উল্লেখ করেছেন, "পূর্ব
পাকিস্তানে বামপন্থী রাজনীতির উন্মেষ ঘটে মূলত দেশভাগের অব্যবহিত পরেই, যখন নবগঠিত
পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর শ্রেণিগত শোষণমূলক চরিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।"। এই
সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি, কৃষক সমিতি এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন পূর্ব পাকিস্তানের
জনগণের মধ্যে শ্রেণি সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে। তারা জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি,
কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবিতে সোচ্চার হয়। এই
প্রাথমিক পর্যায়ে বামপন্থীরা শুধু ভাষার অধিকার নয়, বরং অর্থনৈতিক মুক্তির
বিষয়টিকেও জনগণের সামনে তুলে ধরে।
ন্যাপ: সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জনপ্রিয় ফ্রন্ট
ন্যাশনাল আওয়ামী
পার্টি (ন্যাপ) ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বামপন্থী রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ
প্ল্যাটফর্ম। এটি সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে একটি
বৃহত্তর জনভিত্তি গড়ে তুলতে চেয়েছিল। ১৯৫৭ সালে গঠিত ন্যাপ-এর নেতৃত্বে ছিলেন
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেছেন, "ন্যাপ
ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী একটি ব্যাপকভিত্তিক রাজনৈতিক ফ্রন্ট, যা
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারের দাবিতে সোচ্চার
ছিল।" ন্যাপের লক্ষ্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আধিপত্যের
বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থানেও সোচ্চার ছিল, যা আন্তর্জাতিক
প্রেক্ষাপটে তাদের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছিল।
ইপিসিপি-তে দ্বন্দ্ব এবং ইপিএনএপি’র ভাঙ্গন
সত্তর দশকের শুরুর
দিকে বামপন্থী রাজনীতিতে, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি
(ইপিসিপি)-তে, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের
বিভাজন (সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে) এর প্রভাব পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট
আন্দোলনেও পড়ে। এর ফলে ১৯৫৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ার পর, এর সদস্যরা
প্রকাশ্যে এবং গোপনে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এর ফলশ্রুতিতে ন্যাপও
মস্কোপন্থী ও পিকিংপন্থী – এই দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। তালুকদার মনিরুজ্জামান
এই বিষয়ে আলোকপাত করে বলেছেন, "আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের
মস্কো-পিকিং বিভাজন পূর্ব পাকিস্তানের বামপন্থী রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যা
ন্যাপের মতো বড় দলকে বিভাজনের মুখে ঠেলে দেয়।" এই বিভাজন বামপন্থী
আন্দোলনের ঐক্য ও শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
মস্কোপন্থী ও পিকিংপন্থী দলগুলোর নেতৃত্ব, ১৯৬৭—১৯৬৮
১৯৬৭-৬৮ সাল নাগাদ মস্কোপন্থী ও পিকিংপন্থী ধারাগুলো স্পষ্টতই আলাদা নেতৃত্ব ও কৌশল নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। মস্কোপন্থীরা (যেমন ইপিসিপি, মোজাফফর ন্যাপ) তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শ অনুসরণ করত এবং সাধারণত সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার পক্ষপাতী ছিল। তারা শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানালেও, সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে ততটা সোচ্চার ছিল না। অন্যদিকে, পিকিংপন্থীরা (যেমন মওলানা ভাসানীর ন্যাপের একটি অংশ, পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি) চীনের মাওবাদী আদর্শ অনুসরণ করত এবং সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী ছিল। মনিরুজ্জামান লিখেছেন, "এই সময়ে মস্কোপন্থীরা সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে ঝুঁকেছিল, যেখানে পিকিংপন্থীরা সশস্ত্র বিপ্লবের পথকে প্রাধান্য দিয়েছিল।"।
পিকিংপন্থী বামদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব
পিকিংপন্থী বাম দলগুলোর
মধ্যেও ব্যাপক অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা যায়, যা তাদের কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সিরাজ সিকদারের পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি (ইপিসিপিএমএল), আবদুল
হক-তোয়াহা গ্রুপ এবং দেবেন সিকদার-আবুল বাশার গ্রুপসহ বিভিন্ন ছোট ছোট দল আদর্শগত
এবং কৌশলগত কারণে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই বিষয়ে তালুকদার
মনিরুজ্জামান মন্তব্য করেছেন, "পিকিংপন্থী বামদের মধ্যে আদর্শিক বিভাজন ও
নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তা তাদের একটি সুসংগঠিত শক্তি
হিসেবে কাজ করার ক্ষমতাকে সীমিত করে ফেলেছিল।"। এই বিভাজন তাদের গণভিত্তি
দুর্বল করে দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তাদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনে বাধা সৃষ্টি
করে।
ইপিসিপিএমএল, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট দল (ইবিসিপি), সিসিসিআর, ইবিডব্লিউএম, মাইথি গ্রুপ
মুক্তিযুদ্ধের
সময় পিকিংপন্থী বিভিন্ন বাম দলের উপস্থিতি ছিল। এর মধ্যে পূর্ববাংলা সর্বহারা
পার্টি (ইপিসিপিএমএল), পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট দল (ইবিসিপি), সিসিসিআর
(কমিউনিস্ট সেন্টার অব বাংলাদেশ), ইবিডব্লিউএম (ইস্ট বেঙ্গল ওয়ার্কার্স
মুভমেন্ট) এবং মাইথি গ্রুপ উল্লেখযোগ্য। এই দলগুলোর লক্ষ্য ছিল
পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম, তবে তারা ভারতীয় আধিপত্যের
বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের মূলধারা থেকে দূরে থেকে
নিজস্ব পথে বিপ্লবের চেষ্টা করেছিল, যা তাদের বিচ্ছিন্ন করে তোলে। তালুকদার
মনিরুজ্জামান এই দলগুলোর বিচ্ছিন্নের কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন এবং দেখিয়েছেন
কীভাবে তাদের আদর্শগত অনমনীয়তা এবং নেতৃত্বের কোন্দল তাদের সামগ্রিক
কার্যকারিতাকে হ্রাস করেছিল।
আওয়ামী লীগ ও স্বায়ত্তশাসন দাবি, ছয়-দফা আন্দোলন, এগারো দফার কর্মসূচি
আওয়ামী লীগের
ছয়-দফা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বামপন্থী দলগুলো, বিশেষ করে মস্কোপন্থীরা, এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়।
কিন্তু পিকিংপন্থীরা ছয় দফাকে "ভারতের ষড়যন্ত্র" বা "বুর্জোয়া
জাতীয়তাবাদ" আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেছিল। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় বামপন্থী
ছাত্র সংগঠনগুলোর এগারো দফার কর্মসূচি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এই
এগারো দফায় ছয় দফার পাশাপাশি শ্রমিক-কৃষকদের অধিকার, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নীতি
এবং শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। মনিরুজ্জামান উল্লেখ করেছেন, "এগারো
দফার কর্মসূচি ছিল ছয় দফার একটি বিস্তৃত রূপ, যা বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর
প্রভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের দাবিগুলোকে জোরালো করেছিল।" এটি
গণঅভ্যুত্থানকে একটি ব্যাপকভিত্তিক আন্দোলনে পরিণত করতে সাহায্য করে।
আওয়ামী লীগ ও ১৯৭০ এর নির্বাচন
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করে। এই নির্বাচনে বামপন্থী দলগুলো, বিশেষ করে ন্যাপের দুই অংশ, স্বতন্ত্রভাবে অংশ নেয় এবং সীমিত সংখ্যক আসনে জয়লাভ করে। যদিও তারা এককভাবে ক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হয়, তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় স্বাধিকার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির স্লোগান ছিল, যা জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও গভীর করে তোলে। তালুকদার মনিরুজ্জামান দেখিয়েছেন, বামপন্থীরা এই নির্বাচনকে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানোর একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছিল, যদিও তাদের বিভাজনের কারণে তারা একটি শক্তিশালী বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেনি।
সামরিক হস্তক্ষেপ ও পূর্ব বাংলায় গণহত্যা
১৯৭১ সালের ২৫শে
মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা এবং গণহত্যা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অনিবার্য করে তোলে। এই সামরিক হস্তক্ষেপের পর
বামপন্থী দলগুলোর অধিকাংশ কর্মী ও নেতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মনিরুজ্জামান
এই প্রেক্ষাপটে বামপন্থীদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং উল্লেখ
করেছেন যে, এই পরিস্থিতিতে অনেক বামপন্থী দলই তাদের পূর্বের মতপার্থক্য ভুলে
ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল।
প্রবাসী সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধ
চলাকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ।
মস্কোপন্থী বাম দলগুলো (যেমন ইপিসিপি এবং মোজাফফর ন্যাপ) এই সরকারের প্রতি পূর্ণ
সমর্থন জানায় এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তারা মিত্রবাহিনীর
সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে,
পিকিংপন্থী বাম দলগুলোর মধ্যে বিভাজন থেকেই যায়। কিছু পিকিংপন্থী দল যুদ্ধকালীন
সময়ে ভারত-বিরোধিতার নীতি অনুসরণ করে, যা তাদের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে।
মনিরুজ্জামান মন্তব্য করেছেন, "মুক্তযুদ্ধ চলাকালীন বামপন্থীদের মধ্যে যে
বিভাজন ছিল, তা সত্ত্বেও একটি বৃহৎ অংশ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এবং
অগণিত জীবন উৎসর্গ করেছিল।"
রাজনৈতিক কমান্ডো ও বামপন্থীদের ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রাজনৈতিক কমান্ডো হিসেবে। তারা গেরিলা যুদ্ধের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে। বিভিন্ন গোপন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গ্রামাঞ্চলে তারা সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করে। এই রাজনৈতিক কমান্ডোরা কেবল সামরিক তৎপরতা চালাতো না, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির বার্তা ছড়িয়ে দিত।
উপসংহার
বাংলাদেশের
অভ্যুদয়ে বামপন্থী রাজনীতির ভূমিকা ছিল বহুমুখী এবং সুদূরপ্রসারী। ভাষা আন্দোলন
থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে তারা সক্রিয়ভাবে
অংশ নিয়েছে এবং সমাজের নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছে। অধ্যাপক
তালুকদার মনিরুজ্জামানের 'বামপন্থী রাজনীতি ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়'
গ্রন্থটি এই ঐতিহাসিক সত্যকে অত্যন্ত প্রামাণ্যভাবে তুলে ধরেছে। এটি কেবল
বামপন্থীদের কার্যকলাপের একটি বিবরণ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বাধীনতা
আন্দোলনের একটি ভিন্ন ও গভীর বিশ্লেষণ। মনিরুজ্জামান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে,
স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা কেবল রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং
তা ছিল একটি শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা,
যার জন্য বামপন্থীরা শুরু থেকেই লড়াই করে এসেছিল। তাদের আদর্শ, সংগ্রাম এবং
আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে, যা আমাদের
জাতীয় জীবনে আজও প্রাসঙ্গিক।
No comments