Header ads

আইয়ুব খানের ইকোনমিক পলিসি আলোচনা করো ।। Ayub Khan's Economic Policies

আইয়ুব খানের ইকোনমিক পলিসি আলোচনা করো ।। Ayub Khan's Economic Policies

আইয়ুব খানের ইকোনমিক পলিসি 

১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের শাসনামল দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। তার গৃহীত অর্থনৈতিক নীতিগুলো দেশের প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে এক নতুন গতি এনেছিল, তবে একই সাথে এর কিছু গভীর সীমাবদ্ধতাও ছিল, যা পরবর্তীতে ব্যাপক সামাজিক রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেয়।

 আইয়ুব খানের ক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপট তৎকালীন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা

১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আইয়ুব খান ক্ষমতা গ্রহণের সময় পাকিস্তান একটি গুরুতর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ছিল। দেশভাগের পর থেকেই পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল ভঙ্গুর এবং অব্যবস্থাপনার শিকার।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের চর্চা ছিল দুর্বল। ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের অদক্ষতা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চরমে পৌঁছেছিল।

কৃষি খাতের স্থবিরতা: পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক। কিন্তু ১৯৫০-এর দশকে কৃষি খাত ছিল স্থবির। উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ছিল খুবই ধীর, যা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারছিল না। পুরাতন পদ্ধতি, পর্যাপ্ত সেচের অভাব এবং কৃষকদের মাঝে পুঁজির অভাব এর প্রধান কারণ ছিল।

শিল্পায়নের ধীর গতি: পাকিস্তান শিল্পায়নে পিছিয়ে ছিল। অবকাঠামোগত দুর্বলতা, বেসরকারি বিনিয়োগের অভাব এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট শিল্প খাতের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছিল। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেও পর্যাপ্ত শিল্প উৎপাদন ছিল না, যার ফলে আমদানির উপর নির্ভরতা বাড়ছিল।

বৈদেশিক মুদ্রার অভাব: রপ্তানি আয় কম হওয়ায় এবং আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় পাকিস্তান তীব্র বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ভুগছিল। এটি দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বড় বাধা সৃষ্টি করছিল।

আইয়ুব খানের অঙ্গীকার: এই প্রেক্ষাপটে আইয়ুব খান স্থিতিশীলতা এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, একটি শক্তিশালী কার্যকর নেতৃত্বই কেবল পাকিস্তানকে এই অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারে। তার মূল লক্ষ্য ছিল একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করা, যা সামরিক শক্তির জন্যও অপরিহার্য ছিল। তিনি একটি কেন্দ্রীভূত, পরিকল্পনা-ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছিলেন, যা তৎকালীন "উন্নয়নমূলক স্বৈরাচার" ধারণার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল।

আইয়ুব খানের অর্থনৈতিক নীতির মূল বৈশিষ্ট্য

আইয়ুব খানের অর্থনৈতিক নীতিগুলো মূলত ক্যাপিটালিজম (পুঁজিবাদ) এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিল, তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ এবং পরিকল্পনারও একটি বড় ভূমিকা ছিল। এটি এক প্রকার মিশ্র অর্থনীতির মডেল ছিল, যেখানে বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।

. কৃষি খাত: "সবুজ বিপ্লব"

আইয়ুব খানের শাসনামলে কৃষিক্ষেত্রে "সবুজ বিপ্লব" (Green Revolution) একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য ঘাটতি কমানো এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।

বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া: এই নীতির অধীনে উচ্চ ফলনশীল বীজ (HYV seeds), বিশেষত ধান গমের ক্ষেত্রে, ব্যাপক হারে বিতরণ করা হয়। সারের ব্যবহার উৎসাহিত করতে ভর্তুকি দেওয়া হয় এবং সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণে বড় বড় বাঁধ খাল খনন করা হয় (যেমন ওয়ার্সাক ড্যাম, মংলা ড্যাম) কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন ট্রাক্টর পাওয়ার পাম্পের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সুফল: সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষি উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বিশেষত পশ্চিম পাকিস্তানে গমের উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যায়। খাদ্যশস্যে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।

সীমাবদ্ধতা: সবুজ বিপ্লবের সুফল মূলত বৃহৎ কৃষকদের কাছে পৌঁছায়, কারণ ছোট প্রান্তিক কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল বীজ সার কেনার আর্থিক সক্ষমতা ছিল না। যান্ত্রিকীকরণ কৃষিশ্রমিকদের কর্মচ্যুতি ঘটায়, যা গ্রামীণ দারিদ্র্য বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে। পূর্ব পাকিস্তানে, ভূমি সংস্কারের অভাব এবং সেচের সীমাবদ্ধতার কারণে সবুজ বিপ্লব ততটা সফল হতে পারেনি।

. শিল্প খাত: "আমদানি বিকল্প শিল্পায়ন" (ISI)

শিল্পায়নের ক্ষেত্রে আইয়ুব সরকার "আমদানি বিকল্প শিল্পায়ন" (Import Substitution Industrialization - ISI) নীতি গ্রহণ করে। এর লক্ষ্য ছিল আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

কৌশল: ভারী শিল্পের বিকাশে জোর দেওয়া হয়, বিশেষ করে বস্ত্র, সার, সিমেন্ট এবং হালকা প্রকৌশল শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়। নতুন শিল্পাঞ্চল স্থাপন করা হয় এবং বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে কর সুবিধা, ঋণ সুবিধা এবং আমদানি লাইসেন্স প্রদানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। রফতানিমুখী শিল্পের বিকাশের জন্য "রপ্তানি বোনাস স্কিম" চালু করা হয়।

সাফল্য: এই নীতির ফলে পাকিস্তানের শিল্প উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। জিডিপিতে শিল্পের অবদান বাড়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে দেশীয় চাহিদা পূরণে সক্ষমতা তৈরি হয়।

সীমাবদ্ধতা: ISI নীতি দেশীয় শিল্পকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে দেয়নি, ফলে অদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হয় এবং পুঁজি কেন্দ্রীভূত হয় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে, যা পরবর্তীতে "২২ পরিবারের" ধারণার জন্ম দেয়।

. পরিকল্পনা কমিশন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

আইয়ুব খানের শাসনামলে পরিকল্পনা কমিশন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এই সময়ে দ্বিতীয় (১৯৬০-৬৫) এবং তৃতীয় (১৯৬৫-৭০) পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন বাস্তবায়ন করা হয়।

লক্ষ্য: দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য ছিল কৃষি শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার বাড়ানো এবং বৈদেশিক সাহায্য আকর্ষণ করা। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সামাজিক খাত, যেমন শিক্ষা স্বাস্থ্য, এবং অবকাঠামো উন্নয়নেও জোর দেওয়া হয়।

ভূমিকা: পরিকল্পনা কমিশন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ, সম্পদ বরাদ্দ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির দায়িত্ব পালন করে। এই পরিকল্পনাগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কাঠামোগত দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

. বৈদেশিক সাহায্য বিনিয়োগ

আইয়ুব খানের সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো থেকে ব্যাপক বৈদেশিক সাহায্য বিনিয়োগ আকর্ষণে সফল হয়। স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল, যা এই সাহায্যের প্রবাহকে সহজ করে।

নীতি: সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণ অনুদান গ্রহণ করে।

প্রভাব: বৈদেশিক সাহায্য দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হয়। তবে, এটি দেশের অর্থনীতিকে বৈদেশিক নির্ভর করে তোলে, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

. মুক্তবাজার অর্থনীতি বেসরকারি খাতের উৎসাহিতকরণ

আইয়ুব খান মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বেসরকারি উদ্যোগই দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি।

নীতিগত সংস্কার: সরকারের ভূমিকা নিয়ন্ত্রকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয় এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগের পথ সুগম করা হয়। বিভিন্ন শুল্ক কর হ্রাস করা হয় এবং লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করা হয়। "শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন" (IDBP) এবং "বিনিয়োগ প্রচার ব্যুরো" (IPB) এর মতো প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য।

আইয়ুব খানের অর্থনৈতিক নীতির সাফল্যগুলো

আইয়ুব খানের শাসনামলে পাকিস্তানের অর্থনীতিতে কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়:

জিডিপি প্রবৃদ্ধি: এই সময়ে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ছিল খুবই উচ্চ, যা এশিয়ার অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বেশি ছিল। বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড় প্রায় .% ছিল, যা "উন্নয়ন দশক" (Decade of Development) হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

কৃষি শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি: সবুজ বিপ্লবের কারণে খাদ্য উৎপাদন, বিশেষত গমের উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যায়। শিল্প খাতেও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যার ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে সক্ষমতা বাড়ে।

অবকাঠামো উন্নয়ন: দেশের অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়। রাস্তা, রেললাইন, বিমানবন্দর, এবং সেচ প্রকল্পের মতো বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি বৃদ্ধি পায়।

রপ্তানি প্রবৃদ্ধি: শিল্পের বিকাশের ফলে রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পায়, যা বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়াতে সাহায্য করে।

এই নীতির সীমাবদ্ধতা সমালোচনাগুলো

আইয়ুব খানের অর্থনৈতিক নীতিগুলো ব্যাপক প্রবৃদ্ধি আনলেও, এর কিছু গভীর সীমাবদ্ধতা সমালোচনা ছিল, যা শেষ পর্যন্ত তার শাসনের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

. আঞ্চলিক বৈষম্য:

আইয়ুব খানের নীতির সবচেয়ে বড় সমালোচনা ছিল পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি উন্নয়ন ব্যয়ের অসম বন্টন ছিল স্পষ্ট। পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প অবকাঠামো খাতে সিংহভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়, যখন পূর্ব পাকিস্তানে বিনিয়োগ ছিল তুলনামূলকভাবে কম।

বৈষম্যের উদাহরণ: পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করা হয় যেখানে পূর্ব পাকিস্তান ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রধান অঞ্চল (পাট রপ্তানির মাধ্যমে) সরকারি চাকরিতে এবং সামরিক বাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল নগণ্য। এই বৈষম্য পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র অসন্তোষ বিচ্ছিন্নতাবোধের জন্ম দেয়, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

. আয় বৈষম্য "২২ পরিবারের" ধারণা:

আইয়ুব খানের মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বেসরকারি খাতের উৎসাহিতকরণের ফলে ধনী দরিদ্রের মধ্যে আয় বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে। নীতিগুলো একটি ক্ষুদ্র, প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হতে সাহায্য করে। এটিই পরবর্তীতে "২২ পরিবারের" ধারণা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে, যেখানে দেশের বেশিরভাগ শিল্প ব্যাংক একটি ছোটসংখ্যক পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই চরম আয় বৈষম্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়ায়।

. গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অভাব:

একটি সামরিক শাসকের অধীনে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন বাস্তবায়নে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অভাব ছিল প্রকট। জনগণের মতামত উপেক্ষা করা হয় এবং নীতি প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ আমলাদের প্রভাব বেশি ছিল। এর ফলে নীতিগুলোর কার্যকারিতা এবং জনগণের আস্থা হ্রাস পায়। স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও, তা জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিনিধিত্বকে খর্ব করে।

. কৃষকদের অসন্তোষ:

সবুজ বিপ্লবের সুফল সকল কৃষক শ্রেণির কাছে পৌঁছাতে পারেনি। ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার সামর্থ্য না থাকায় এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। উপরন্তু, যান্ত্রিকীকরণ গ্রামীণ বেকারত্ব বাড়িয়ে তোলে। ভূমি সংস্কারের অভাব এবং ফসল তোলার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানে।

আইয়ুব খানের অর্থনৈতিক নীতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

আইয়ুব খানের অর্থনৈতিক নীতিগুলো নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কাঠামোকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করেছিল

শিল্প অবকাঠামোগত ভিত্তি: তার শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত শিল্প কারখানা এবং অবকাঠামো পাকিস্তানের পরবর্তী অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করে। দেশের শিল্প কৃষি উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

বৈষম্যের উত্তরাধিকার: তবে, এই নীতির ফলে সৃষ্ট আঞ্চলিক আয় বৈষম্য পাকিস্তানের সামাজিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট ক্ষোভ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি বড় কারণ ছিল। "২২ পরিবারের" মতো ধারণা পরবর্তীতে পাকিস্তানে পুঁজিবাদের একটি নেতিবাচক দিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আজও একটি বড় সমস্যা।

পরিকল্পনার গুরুত্ব: তার শাসনামলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব স্বীকৃত হয়, যা পরবর্তীতে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় একটি আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়।

শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে অবহেলা: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর অত্যধিক জোর দেওয়ায় সামাজিক খাত, বিশেষ করে শিক্ষা স্বাস্থ্য, তুলনামূলকভাবে অবহেলিত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে মানবসম্পদ উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আইয়ুব খানের অর্থনৈতিক নীতিগুলো দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সফল হলেও, এর অন্তর্নিহিত বৈষম্য এবং গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অভাব ছিল তার পতনের অন্যতম কারণ। এই সাফল্য ব্যর্থতাগুলো ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছিল: কেবল সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক সুষম উন্নয়নই একটি দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

No comments

Theme images by Maliketh. Powered by Blogger.