Header ads

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক সমস্যাগুলো আলোচনা কর। Political problems of East and West Pakistan

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক সমস্যাগুলো আলোচনা কর। Political problems of East and West Pakistan

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক সমস্যাগুলো আলোচনা কর।

    গণতান্ত্রিক চেতনা ধারণ করে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতার পর সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু হলেও সেখানে বাস্তবায়িত হয়েছে স্বৈরশাসন। রাজনৈতিকভাবেও পূর্ব বাংলার জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের নিকট শোষণের শিকার হয়। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম অংশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানে কুক্ষিগত থাকে। যদিও দ্বিতীয় গণপরিষদ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি ছিল, পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাঙালিদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে দেওয়া হতো না। 

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক বৈষম্য: পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক বৈষম্যগুলো নিম্নে আলোচনা কর হল: 

১.    নেতৃবৃন্দের প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ: রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি চরম বিমাতাসূলভ আচরণ করে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ৪ জন রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে মাত্র একজন ছিল বাঙালি এবং তিনিও ছিলেন উর্দুভাষী, প্রধানমন্ত্রী ও গর্ভনরসহ সকল সেক্টরে পশ্চিম পাকিস্তানিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। 

২.    পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কুটকৌশল: পাকিস্তান রাষ্ট্রের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের হওয়া সত্ত্বেও তাদের রাজনৈতিক ভাবে মর্যাদা না দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের মুখাপেক্ষী করে রাখা হয়। বাঙালিদের দূর্বলতা অথবা পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের কারণে পাকিস্তানের রাষ্ট্র গঠনে পূর্ব পাকিস্তানিদের কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে দেওয়া হয়নি। 

৩.    সংবিধান প্রণয়ন: স্বাধীনতা পরপরেই সংবিধান প্রণয়নের কথা উল্লেখ থাকলেও পাকিস্তানে প্রথম সংবিধান প্রণীত হয় ১৯৫৬ সালে। যদিও সংবিধানে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রণয়নের কথা থাকলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি। উদ্দেশ্য একটাই, পূর্ব পাকিস্তানিদের দমিয়ে রাখা এবং শোষণ করা। মাত্র দুই বছরের মধ্যে পাকিস্তানে জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা সামরিকভাবে ক্ষমতা দখল করেন সংবিধানকে বাতিল ঘোষণা করেন । 

৪.    বাঙালি স্বার্থের প্রতি অবহেলা: স্বাধীনতা অব্যবহিত সময় হতে পূর্ব বাংলার জনগণ স্বয়ত্তশাসন দাবি করলেও পেয়েছে একনায়কতান্ত্রিক ও সামরিক শাসন। টানা সামরিক শাসনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পাকিস্তানে কখনোই জাগ্রত হয়নি। অভ্যন্তরীন উপনিবেশবাদের মাধ্যমে সমাজ, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি থেকে বাঙালিদের বিচ্ছিন্ন করে রাখে ও শোষণ চালায়। 

৫.    নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি অবহেলা: দেশ পরিচালনায় মুসলিম লীগের ব্যর্থতা ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পূর্ব বাংলার সচেতন মধ্যবিত্ত শ্রেণি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিয়ে জয়ী করেন। সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন এবং সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভা পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলে ১৯৫৭ সালে তাকে পদচ্যুত করা হয়। এভাবে তারা পূর্ব বাঙালিদের মনে গণতন্ত্রের প্রতি অনীহা ভাব জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিল। 

৬.    সিদ্ধান্ত গ্রহণ: পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক যথেষ্ট উচ্চ শিক্ষিত ছিল এবং দেশ পরিচালনায় উপর্যুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা তাদের ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের রাজনীতিতে সকল সিদ্ধান্তই নেওয়া  হত পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের দ্বারা এবং অবশ্যই তা পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থকে ঘিরে। 
    উপর্যুক্ত আলোচনা পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানিরা রাজনৈতিকভাবে অবহেলিত ও বঞ্চিত ছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তাদেরকে সরকার গঠনে বঞ্চিত করা হয়। এটা রাজনৈতিক বৈষম্যের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

No comments

Theme images by Maliketh. Powered by Blogger.